একটু পরমত সহিস্নু হয়ে আমার এই লেখাটা পড়বেন। সংকীর্ন দলীয় মনোবৃত্তি নিয়ে আমার এই লেখা পড়লে কিছুই বুঝবেন না। একটু দেশপ্রেম মানসিকতা নিয়ে পড়লে অবশ্যই তাড়াতাড়ি বোধগম্য হবে এবং আমার যুক্তিগুলো ভালভাবে বুঝবেন। আমি পাঠকের গঠনমূলক সমালোচনা বা মন্তব্যও আশা করছি।

প্রথমেই বলে রাখি, ৭০-৮০ দশকে রাজনৈতিক অঙ্গনে নাকি একটা কথা প্রচলিত ছিল, ভিয়েতনামে বৃষ্টি হলে, বাংলাদেশের বামপন্থীরা এখানে মাথায় ছাতা ধরে। অতি কৌশুলি বুদ্ধিমান এবং একটু বেশি মাত্রায় সুবিদাবাদী জাতীয় রাজনৈতিক নেতারা এটা বলে বেড়াতেন। বিষয়টা যখন শুনেছি তখন আমি মোটামুটি অনেকখানি লায়েক হয়ে উঠেছি। তারুণ্যের রোমন্টিসিজম এর কারনে অনেক বিষয়ে এখনও আমি স্বপ্নবুনি প্রতিদিন-প্রতিরাতে-প্রতিটি মুহূর্তে, মনে ধারন করি বাংলাদেশে সমৃদ্ধশালী কার্যকর অর্থণেতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের।

প্রথমে আমি সবাইকে ৯০ পূর্বের সোভিয়েত এবং আমেরিকার স্নায়যুদ্ধ চলাকলীন সময়টাতে বিশ্ব রাজনীতির দিকে একটু লক্ষ্য করতে বলবো! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, অখন্ড রাশিয়া বা সোভিয়েত থাকাকালীন সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি, একচেটিয়াভাবে বিশ্ব মোড়ল বলে কিছু ছিল না। পৃথিবী ছিল ভারসাম্যের রাজনীতিতে। তর্জন গর্জন ছিল সবপক্ষ থেকেই! পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরিন রাজনীতিও অনেকখানি নির্ভর করতো এই দুই পরাশক্তির লেজুড়বুত্তি কিংবা অনুসরনে। বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম ছিল না বললে, সত্যকে অস্বীকার করা হবে। ৯০ পরবর্তী সময়ে মিখাইল গরভাচেভের সময় সোভিয়েত পতনের পর, বাংলাদেশে সাময়িক ধস নামে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে, অনেকেই হাতাশাগ্রন্ত হন, অনেকেই সুবিধা বঞ্চিত হবেন বা আর সোভিয়েত বুত্তি পাবে না মনে করে নিজ নিজ আখের খোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও, হাল ধরে ছিলেন কিছু আবেগী এবং স্বপ্নবান মানুষ। এই স্বপ্নবানদের অপরিপক্কতা, অদূরদৃষ্টিতা থাকা স্বত্তেও সামজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন এখনও টিকে আছে।

এদিকে ৯০ এর দশকের পর সোভিয়েত বিপর্যয়ের পর রাতারাতি বিশ্বমোড়ল বনে যায় আমেরিকা! তাদের এজেন্ট এবং অর্থনীতিবিদরা ভয়াবহ এক ত্বত্ত আবিষ্কার করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর, কিংবা এর আগেই। যেই দেশের জ্বালানীশক্তি যতবেশি মজুদ থাকবে সেই দেশিই হবে আগামী বিশ্বের সমৃদ্ধশালী। অতএব নিজেরটা মজুদে থাক। সারা বিশ্বের জ্বালানী নিজের কবজায় নিতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী ওই ত্বত্ত আজ বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে এক বিভিষিকাময় পরিস্থিতির দিকে। কিন্তু বাধা হয়ে দাড়াবে কে? ১৯৫৯ সালের ১লা জানুয়ারী কিউবার একনায়কতন্ত্রী শাসক ফুরগেনশিও বাতিস্তার পরাজয় ঘটে এবং ফিদেল কাস্ত্রো কর্তৃক কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তিত হয়। টনক নড়ে আমেরিকার। প্রথমেই চিহ্নিত হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন, তারপর কিউবা। ভৌগলিকভাবে আমেরিকার কাছাকাছি এবং সামাজিক আচারআচরন সংষ্কৃতি কিছুটা এক হওয়ায় সমাজতান্ত্রিক চেতনা নিজেদের দেশে বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনায়, আমেরিকা কিউবার উপর নিষেধাঙ্গা আনে। এই তালিকায় চীন নাই, কারন চীনা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কিছুটা ছিল বা আছে ভারসাম্য বজায় রেখে, কিছুটা ছোটভাই সুলভ মনোভাব বজায় রেখে, নিজে বাচলে বাপের নাম (ইদানীং পরিবর্তন লক্ষনীয় মাত্রায়)। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়কালে রাশিয়া আমেরিকা বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তি ছিল! এক্ষেত্রে বোকামীটা করে বসে রাশিয়া। সারাবিশ্বে সামাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে ছড়িয়ে নিতে নিজেদেরকে উপস্থাপন করে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকায়। একে একে যুক্ত করতে থাকে বিভিন্ন দেশকে সোভিয়েতের সাথে। আর আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব বা শোসনের ইতিহাসতো আরো পুরাতন। (আসলে আমেরিকা কাদের? জানতে বাংলায় অনুবাদ করা এই বইটি পরতে পারেন – আমারে কবর দিও হাটু ভাঙ্গার বাকে)।

ভিয়েতনামের উপর নজর দেয় ১৯৫৯ সালেই। সমাজতান্ত্রিক চেতনা নস্বাৎ করতে দুই ভিয়েতনামের মধ্যে কৌশলে যুদ্ধ বাধায় আমেরিকা। লক্ষ্য অপরমূল শক্তি রাশিয়ার সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেতনা যেন ছড়িয়ে পরতে না পারে। কমিউনিস্ট শাসন সবদিকে যেন ছড়িয়ে না পড়তে পারে সে লক্ষেই আমেরিকা এই যুদ্ধে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কারন সমাজতান্ত্রিক চেতনা যত বিকশিত হবে, লক্ষ্য অর্জন ততই কঠিন হবে। অতএব ব্যবস্থা নেও। যুদ্ধ মূলত শুরু হয় দক্ষিন আর উত্তর ভিয়েতনামের মাঝে। আর এতে আমেরিকা দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষে ১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সৈন্য পাঠায়, কিন্তু এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী নানাবিধ চক্রান্ত ষড়যন্ত্র থেকে থাকেনি। এরপর আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে শুরু হয় উপসাগরিয় যুদ্ধ! ভাবতে পারেন একটি দেশের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ঘাড়ে চেপে ৩৪ দেশের যুদ্ধ! কুয়েত ইরাকের দখল মুক্ত হলো! কুয়েতবাসীর লাভটা কি হলো? ঘোড়ার আন্ডা! কুয়েত তেল সমৃদ্ধ দেশ, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ যেই দেশের মানুষ আরবীতে কথা বলার চাইতে ইংরেজীতে বেশি পরদর্শী! কেন? কারন কুয়েতের তেলের উত্তোলনের দ্বায়িত্বে এখন একটি বহুজাতিক কোম্পানী। অপরিশোধিত তেলে ব্যারল প্রতি নির্ধারিত শতকরা হিসেবে কমিশন উত্তোলন খরচের উপর মুনাফা দিতে হবে।

চলবে….