প্রিয় গ্রাহক/শুভানুধ্যায়ী ও আমার ব্যবসায়ী বন্ধুরা!

আপনাদের কাছ থেকে শুধু মাত্র ৩০ মিনিট ধার নিচ্ছি। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলছি এই ৩০ মিনিট যদি আপনার জীবনে কাছে না লাগে; তবে, মিনিট হিসেবে আপনি প্রতিদিন যা আয় করছেন, আমি ৩০ মিনিটের গুনিতকে তা ফিরত দিব। এটি আমার ওয়াদা। যেহেতু এটি স্ববিনয়ে ও স্ববিস্তর আলোচনা। সেহেতু ধৈর্য্য এবং মনোযোগ আর্কষন করছি।

প্রথম কথা হলো, আসুন মায়া ছড়াই। মায়া ছাড়া, পারষ্পারিক আলোচনা বৃথা। আগেই বলে রাখি নিচে কিছু চরম কঠিন এবং সত্য কথা লিখা আছে। সত্য সর্বদাই কঠিন এবং কড়া। এগুলি হজম করতে পারলে আবশ্যই আপনি সফল হবেন এবং আশেপাশের অনেককে নিয়ে সুখে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবেন।



 

প্রিয় গ্রাহক/শুভানুধ্যায়ী ও আমার ব্যবসায়ী বন্ধুরা!

আপনাদের কাছ থেকে শুধু মাত্র ৩০ মিনিট ধার নিচ্ছি। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলছি এই ৩০ মিনিট যদি আপনার জীবনে কাছে না লাগে; তবে, মিনিট হিসেবে আপনি প্রতিদিন যা আয় করছেন, আমি ৩০ মিনিটের গুনিতকে তা ফিরত দিব। এটি আমার ওয়াদা। যেহেতু এটি স্ববিনয়ে ও স্ববিস্তর আলোচনা। সেহেতু ধৈর্য্য এবং মনোযোগ আর্কষন করছি।

প্রথম কথা হলো, আসুন মায়া ছড়াই। মায়া ছাড়া, পারষ্পারিক আলোচনা বৃথা। আগেই বলে রাখি নিচে কিছু চরম কঠিন এবং সত্য কথা লিখা আছে। সত্য সর্বদাই কঠিন এবং কড়া। এগুলি হজম করতে পারলে আবশ্যই আপনি সফল হবেন এবং আশেপাশের অনেককে নিয়ে সুখে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবেন।

আপনার সময় শুরু এখন!

মাথায় রাখুন ~"When You Sounds Good, You are Looking Good!" আলোচনার শুরুতে কয়েকটি প্রশ্ন! আপনি কি কোন ব্যবসীয়িক চুক্তি কিংবা ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন? কিংবা আপনার ব্যবসার জন্য কারো সাথে যেকোন ধরনের সার্ভিস/পন্য নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন? অথবা নতুন কাউকে পার্টনার হিসেবে নিতে চাচ্ছেন বা কারো সাথে পার্টশপে যাচ্ছেন। কিংবা এমনকি? কোন প্রতিষ্ঠানকে আপনার সার্ভিস বা পন্য সরবরাহ করতে চাচ্ছেন? শুরুর কাজঃ প্রথম কাজ, ইমোশন বা আবেগ পরিহার করুন। পেপার ওয়ার্ক রেডি করুন। নইলে ভবিষ্যত্বে পস্তাবেন। পেপার ওয়ার্ক করার পূর্বে পার্টনার কিংবা ভেন্ডরের বক্তব্য লিখিতভাবে পড়ুন এবং বুঝুন। চুক্তি করার আগে আপনার সাথে অনেক আলোচনা পর্যালোচনা হতেই পারে। অনেক ধরনের Offer ও থাকবে, যেটি পরবর্তিতে থাকতে পারে আবার নাও পারে। আবার একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্টান থেকে একই সাথে একই কাজের জন্য দুই বা ততোধিক ভিন্ন ভিন্ন অফারও থাকতে পারে। সবগুলি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন কিংবা শুনুন। যেকোন একটি কিংবা দুটি গ্রহন করুন এবং নোট রাখুন। চুক্তি সম্পাদনের পরে, পূর্বের সব কথা, আলোচনা এবং অফার ভুলে যান। এটিই আপনার এবং আপনার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলজনক।

ভবিষ্যত্বে যদি কোন ধরনের জটিলতার সম্মুখিত হোন তবে শুধুমাত্র-কেবলমাত্র সম্পাদিত চুক্তিই ফলো করুন। এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিন, কিংবা মানিয়ে নিন। যেকোন চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে কিংবা অফার গ্রহনের  পূর্বে মেয়াদ অবশ্যই খেয়াল করবেন। মনে রাখবেন কোন অফার বা কোন চুক্তিই কিন্তু আজীবনের জন্য হয় না। যেকোন সার্ভিসের কিন্তু অবশ্যই একটি মেয়াদ থাকে। এমনকি কোন সার্ভিস প্রভাইডার বা পন্য সরবরাহকারীরও প্রদেয় দরপত্রেরও একটি নূন্যতম মেয়াদ থাকে। আর দরপত্র (Quotation) আহবান করার সময় আপনার প্রতিষ্ঠানের চাহিদা সার্ভিস প্রদান বা পন্য সরবরাহকারী ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে লিখিতভাবে অবহিত করুন। ক্ষেত্র বিশেষে এমনও হতে পারে সার্ভিস প্রদান বা পন্য সরবরাহকারী ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানও দরপত্র (Quotation) এর সাথে সার্ভিস বা পন্য সরবরাহের জন্য নিজেস্ব বিধি ও শর্ত যুক্ত করতে পারে। সেগুলি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। উভয় পক্ষের সম্মিলিত প্রস্তাব গ্রহন বা নাকোচের অধিকার সমান! সেক্ষেত্রে সার্ভিস গ্রহন বা পন্য সরবরাহের পূর্বে সার্ভিস গ্রহনকারী অবশ্যই Work Order ইস্যু করবেন অথবা উভয়পক্ষ MOU করে নিবেন। মেয়াদান্তে, আপনাকে সার্ভিস প্রদান কিংবা আপনার সাথে কাজ করার ইচ্ছা অনিচ্ছা দুটোই কিন্তু চুত্তির উপর নির্ভর করে। আইনানুগভাবে আপনি কোন অবস্তাতেই তাকে বাধ্য করতে পারবেন না। কিংবা আপনি তাকে আপনার অতিরিক্ত চাহিদার কথা বলতেই পারেন, সেটা অনুরোধ কিংবা সম্পর্কের জায়গা থেকে কিংবা সম্মানিত করার জন্যই হয়তো আপনার সাথে সম্পাদিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন সেটা করতে তিনি কিংবা তার প্রতিষ্ঠান বাধ্য নয়। উপরোক্ত কথা গুলি এবার ঠিক উল্টো করে ভাবুন। ধরুন আপনি, নতুন কারো সাথে পার্টনার হতে চাচ্ছেন কিংবা আপনি বা আপনার প্রতিষ্ঠান সার্ভিস প্রদান করতে চাচ্ছেন। দরপত্র দিন, স্পষ্ট শব্দে আপনার সকল বক্তব্য লিখিতভাবে দিন। এবং অবশ্যই চুড়ান্তভাবে চুক্তিপত্র করুন বা Work Order বা MOU করে নিন। যদি কোন কারনে, WORK ORDER বা MOU করা না হয়ে থাকে, তবে অন্তত Submit a Quotation এবং কোটেশনটির একটি রিসিভ কপি রাখুন। এক্ষেত্রে, মেইলও করতে পারেন এবং গ্রাহকের কাছ থেকে সম্মতিসূচক ফিরতি মেইল নিয়ে নিন। আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমি ২০০১ সালে থেকে একটি আইটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। গ্রাহকের সাথে আমার স্বর্বাত্মক চেষ্টা সম্পর্ক উন্নয়ন করা। যখন কোন ক্লায়েন্ট আমার সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে কিংবা আমি ইমপোজ করি তখন আলোচনা পর্যালোচনার পরে অবশ্যই একটি Quotation কিংবা Offer Letter দেই, প্রয়োজনে এক বা একাধিকবার Revise করি। এবং প্রতিবারের জন্য যতবার প্রয়োজন হয় ততোবার Revision Date উল্লেখ করি। শুধু তাই নয়, প্রতিবার আলোচনার সূত্র উল্লেখ্য করি। অনেক সময় গ্রাহক Work Order প্রদানে গড়িমসি করে। কিংবা, কাজের চাপে বা সার্ভিসটি এত জরুরী যে, তাড়াহুড়ায় আর Work Order বা MOU সাইন করে না। সেক্ষেত্রে আমি Received Quotation নিয়ে রাখি। আমার একটি সুবিধা হলো প্রায় সকল সার্ভিস ও পণ্যেরই একটি ভার্চুয়াল কপি করা আছে। যেখানে সব শর্ত ও সার্ভিস বিধি ও সার্ভিসের বা পন্যের সকল বিবরণ বিস্তারিত দেয়া আছে। যা মোটামুটি সবার জন্যই স্ট্যান্ডার্ড। গ্রাহক চাইলেই অনলাইনেই অর্ডারের সাথে পেমেন্টও করতে পারে। কখনো প্রয়োজন হলে কাষ্টম সার্ভিসও প্রদান করি। তখন কিন্তু অবশ্যই Work Order নিয়ে থাকি বা MOU সাইন করি। Quotation বা MOU সাইন না হলে, আমার দেয়া Quotation এর একটি রিসিভ কপি নেয়া থাকে বা অন্তত ইমেইলে গ্রাহকের একটি সম্মতিসূচক মেইল পাঠাতে বলি। সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রাহক যদি সময় সল্পতায় Work Order না দিয়ে থাকে তবে Quotation ও সার্ভিসপ্রদান নীতিমালা ফলো করি। কখনো কখনো গ্রাহকের এতে আপত্তি থাকলেও, আমি কর্নপাত করি না। গ্রাহক সবসময় সর্বদা সম্মানিত। কিন্তু, একথাও সত্য গ্রাহকের গাফলতির দায় দ্বায়িত্ব নিশ্চয়ই সার্ভিস প্রদানকারী বা পন্য সরবরাহকারীর উপর বর্তায় না। তবে, হ্যা যেহেতু ব্যবসা করাই লক্ষ্য, সেহেতু গ্রাহককে Work Order/MOU এর স্যাম্পলও প্রদান করি গ্রাহকের সুবিধার্থে।

* কন্ফিক্টেড বা সংঘাতঃ আমাদের দেশে ব্যবসায়ির সংখ্যা প্রতি দিন প্রতিনিয়ত বাড়ছেই। কিন্তু সেই হারে কর্পোরেট নেচারটা ঠিক দাড়াচ্ছে না। অনেকসময় গ্রাহক সার্ভিস বা পন্য নিতে চায়। মার্কেট খুব Competitive... গ্রাহক চায় স্বস্তায় সর্বোচ্চ সেবা। আর যারা সার্ভিস প্রদান করতে ইচ্ছুক, তাদের সমস্যা স্বস্তায় সার্ভিস প্রদান করতে গেলে তাদের অস্বিত্বই থাকে না এমনবস্থা গিয়ে দাড়ায়। করনীয় কি? আমি যা ফলো করি (অনেক চড়াই উৎরাইয়ের পরে এগুলি আয়ত্তে আনছি ভাই, অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি) কখনোই স্বস্তা দরে সার্ভিস প্রদান বা পন্য সরবরাহ করবেন না। যতটুকু সম্ভব ঠিক ততটুকু কমদামে দেয়ার চেষ্টা করবেন। লক্ষ্য রাখবেন, যেন স্বস্তায় দিতে গিয়ে নিজের ব্যবসায়িক আর্থিক বা সুনামের ক্ষতি না হয় কিংবা মানসম্মত সার্ভিস প্রদান বা পন্য সরবহার করতে যেন সমস্যা না হয়। বিষয়টা যেন উইন উইন হয়। শুধুমাত্র আপনি সুবিধা নিবেন আর গ্রাহক পাবে না, এমন মানষিকতা বাদ দিন। মনে রাখবেন দিন শেষে, গ্রাহক টিকে থাকলে আপনি টিকে থাকবেন। স্বস্তা দরের সার্ভিস বা পন্য গ্রহন করবেন না। বরং সার্ভিস প্রদানের অভিজ্ঞতা বা পন্য সরবাহের অভিজ্ঞতা এবং অবশ্যই অবশ্যই তাদের বিক্রোয়ত্তর সেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতি লিখিতভাবে কি আছে তা লক্ষ্য করুন। মৌখিক কোন প্রতিশ্রুতিই ধর্তব্য না। আর অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, আপনার কারনে কোন অবস্তাতেই যেন, সার্ভিস প্রদানকারী বা পন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখিন না হয়। কারন আপনি যে ইন্ডাষ্ট্রিতে ব্যবসা করছেন, একই ইন্ডাষ্ট্রিতে সেবা বা পন্য প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে। আর অবশ্যই বিষয়টা যেন উইন উইন হয়। কারন, বেকওয়ার্ড লিংকেজ বা সপ্লাই চেইন ঠিক থাকলেই আপনার ব্যবসা চলমান। নতুনদের সুযোগ দিন তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে। কিংবা তাদের কর্ম স্পৃহা দেখে। কম দাম বা স্বস্তা দর দেখে কাজ করিয়েছেন তবে মনে রাখুন আপনি ধরা খাচ্ছেন এবং অন্যদের উপরও আস্তা হারাচ্ছেন। স্বস্তা দরের কাজ মানে কি জানেন? আপনি একটা রিক্স নিচ্ছেন আর প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপনাকে বা আপনার প্রতিষ্ঠানকে গিনিপিগ বানাচ্ছে। তার দরকার রিয়েল প্রজেক্ট অভিজ্ঞতার জন্য। সে যদি সফল হয় তো হলো, কিন্তু আপনার? যদি সফল না হয় আপনার কিন্তু সময় এবং টাকা দুটোই গেল। তাই বলে কি নতুনরা কাজ করবে না? অবশ্যই করবে, তারা কোন প্রতিষ্টিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অভিজ্ঞতা নিবে। তাদের সেই অভিজ্ঞতা ও স্পৃহা দেখে কাজ দিবেন। যেকোন ইন্ডাস্ট্রিতেই ফ্রেশারদের দরকার অনেক বেশি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সামনে তারাইতো হাল ধরবে। কিন্তু এখনই যদি শুরুতে বা মাঝপথেই সব গুড়েবালি দেয়। তবে সামনে কিসের হাল ধরবে?

সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সামনে কখনোই কম্পেয়ারিং এ যাবেন না। ধরুন, আপনি বল্লেন... ‍ওমুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সেম দামে ভাল সেবা বা পন্য দিচ্ছে! কিংবা বল্লেন সেম সেবা বা পন্য ওমুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আরো কম দামে দিচ্ছে। আপনি কি করলেন জানেন? নিজের ভবিষ্যত্ব নষ্ট করলেন। আপনি হয়তো দাম কমানোর জন্য এই কথা বলছেন, ইমোশনাল ব্লাকমেইল করার জন্য এই কথা বলছেন। আসলে ঘটনা ঘটলো উল্টো। এখন যদি, ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বলে বসে তাহলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বলুন সার্ভিস বা পন্যটি আমাকেও দিতে। তখন কি করবেন? ভাবছেন এমন বলে নাকি? উত্তর হচ্ছে। হ্যা বলে! বিশ্বাস হয় না? আমাকে বলে দেখুন।

এতে করে যা হয়: সেবা প্রদানকারী বা পন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সুযোগ নিতে পারে। আর গ্রাহক যদি, সেবা প্রদানকারী বা পন্য সরবরাহকারীকে এমন বলেই ফেলে। তবে, অনৈতিক সুযোগ নিবেন না। বরং গ্রাহককে অন্যদের সাথে আপনাকে কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা না করার অনুরোধ করুন। এবং বিনয়ের সাথে আপনার বা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরুন। প্রয়োজনে পন্যের বিবরন ও অভিজ্ঞতা কর্মদক্ষতা শেয়ার করুন।

* ওয়াকিং চেকলিস্টঃ যেকোন নতুন বা পুরাতন কাজের চেকলিস্ট করুন। গ্রাহকের সাথে বা সেবা প্রদানকারী/পন্য সরবরাহকারীর সাথে চেকলিস্ট নিয়ে পর্যালোচনা করুন। প্রায়রিটি নির্ধারন করুন। কাজের অগ্রগতি ও সমস্যা নির্নয় করুন। সমস্যা নিয়ে আলোচনা না করে, সমস্যা থেকে উত্তরনের বিষয়ে আলোকপাত করুন। পারষ্পারিক দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। * প্রতিষ্ঠানের অধিনস্তরা অন্তরায়ঃ  সকল চাকুরিজীবির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক এই প্রসঙ্গের অবতারনা করছি। ব্যক্তি জীবনে আমিও প্রায় ১২ বছরের অধিক চাকুরিই করেছি। আমার বাবাও একজন চাকুরিজীবিই ছিলেন। কিন্তু এই প্রসঙ্গটি আনা জরুরি বিধায় এনেছি।

খুবই সেনসেটিভ একটি বিষয়। ধরুন আপনি বা আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনার জন্য আপনি কোন এক ভেন্ডরকে এসাইন করলেন। কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি (সবাই না, কিছু কিছু! সংখ্যায় এরা কম কিন্তু এরা খুবই চতুর) যিনি এই কাজের জন্য দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত, ইনি হয় নিজের কাজে গড়িমসি করছেন। কিংবা দায় চাপাচ্ছেন ভেন্ডরের উপর। লক্ষ্য রাখুন.. এরা সার্ভিস প্রদানকারি বা পন্য সরবরাহকারীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে কিনা। অথবা নিজের দায়িত্বে অবহেলা করছে কিনা। একটা কথা মাথায় রাখুন! ভেন্ডরও কিন্তু আপনার মতোই একজন ব্যবসায়ি, সে নিজে চাইবে না। তার ব্যবসার ক্ষতি হোক। আবার এমনও হতে পারে, ভেন্ডরের কর্মচারিই সার্ভিস প্রদান কিংবা পন্য সরবরাহে নিজের গাফলতি করছে। কারন, ব্যবসায়ীর ক্ষতি হলে তার কিছু যায় আসে না। মাস শেষে তার বেতন হলেই হলো। অথচ সে এটা বুঝে না। ব্যবসায়ীর ব্যবসাটা হলেই তার বেতন হবে। বোনাস হবে ক্ষেত্র বিশেষে, প্রফিট বোনাসও হবে হয়তো। বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখুন! সার্বক্ষনিক নজরদারি করুন।

আর যারা সেবা প্রদান বা পন্য সরবরাহ করবেন। তারা কোন অবস্তাতেই আপনার গ্রাহকের অধিস্তদের বাড়তি কোন সুবিধাই দিবেন না। কারন, আজ আপনার কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে কাজ পাইয়ে দিলেও, আগামীদিনে অন্যের কাছ থেকে আরো বাড়তি সুবিধা নিয়ে আপনাকে বাতিল করে দিবে না, তার কোন গ্যারান্টি নাই। মনে রাখবেন, অনৈতিক ব্যক্তির কিন্তু কোন ইথিক্স নাই!

বাস্তবিক কিছু উদাহরন তুলে ধরুনঃ সেবা বা পন্যের সহজ কিছু উদাহরন দিন। গ্রাহক যেন বুঝে নিতে সহজ হয়। অদ্ভুৎভাবে আমাদের সকল ব্যবসা ও জীবনচারনের সাথে আশে পাশের অনেক কিছুরই মিল আছে। অথচ বিষয়গুলি পারষ্পারিকভাবে সম্পর্কিত নয়।

উদাহরন সরূপ; দুটি উদাহরন নিচে দিলাম: আমার যেহেতু আইটি ফার্ম। গ্রাহককে প্রায়শই আমাকে হোস্টিং সম্বন্ধে ধারনা দিতে হয়। কোনটা ডোমেইন কি? হোস্টিং কি? হোস্টিং কত প্রকার? তার আবার কোনটার কি সুবিধা অসুবিধা ইত্যাদি। তো আমি যে উদাহরন ব্যবহার করি... ডোমেইন হচ্ছে আপনার মোবাইলের একটি নাম্বারের মতো.. যেমন: গ্রামীন, বাংলালিংক, এয়ারটেল, রবি, টেলিটক এর নাম্বারের মতো। গ্রাহকের একটি নাম্বার থাকে.. যেটি ইউনিক। ডোমেইন ঠিক তেমন.. অনলাইনে গ্রাহকের নামে একটি ডোমেইন নিবন্ধিত থাকে... তার আবার কিছু এক্সটেনশনও আছে যেমন: .com, .net, .org, .xyz, .bz, .biz এগুলো সব ওই মোবাইলের এক্সটেনশনের মতোই যেমন: 013, 014, 015, 016, 017, 018, 019 ইত্যাদি কিন্তু বাকি সাতটি ডিজিট সেম। তেমনি গ্রাহকের নামে একটি ডোমেইন থাকবে সেটা যেকোন এক্সটেনশনের হতে পারে। আবার সেম নামে একাধিকও থাকতে পারে। যেটা অনেকে মোবাইলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। শেষের ছয় বা সাতটি ডিজিট একই।

আবার হোস্টিং এর জন্য উদাহরন দেই! এমনভাবে:
শেয়ারড হোস্টিং মানে আপনি অনেকের সাথে একই সার্ভার শেয়ার করবেন। আপনার জন্য সার্ভারের একটা অংশ নির্ধারিত থাকবে। যেটা মাসে মাসে কিংবা বছর বছর আপনি পে করবেন। এটা জাস্ট একজন ভাড়াটিয়া বাসার মতো। থাকতে পারবেন, খাইতে শুইতে সবই পারবেন কিন্তু সবকিছু রেসটিকটেড। সন্তান জন্মও দিতে পারবেন। কিন্তু সন্তান বেশি হইলে বাড়িওয়ালা কেচাল করবে। পানি বেশি খরচ করতে পারবেন না, টাইম টু টাইম পানি পাবেন। ছাদে যেতে পারবেন না, বেলকনিতে কাপড় শুকাইতে দিবেন। রাত দশটায় সিড়ির লাইট বন্ধ হয়ে যাবে। এগারটার পরে গেইটে তালা ইত্যাদি ইত্যাদি। তেমনি শেয়ার হোস্টিং আপনি বেশি ভিজিটর আনতে পারবেন না। ইচ্ছামতো প্রয়োজনীয় সফটওয়ার বা এ্যাডঅনস ব্যবহার করতে পারবেন না বা নির্দিষ্ট কিছু ডিফল্ট সফটওয়ার বা এ্যাডঅনস ছাড়া অনেক কিছুই ব্যবহার করতে পারবেন না। ইমেইল চালাচালিতেও কড়া নজরদাড়ি, কিংবা স্পেস ও ব্যান্ড উইথ ও ভিজিটর ট্রাফিক নিয়াও থাকবে নানারকম জটিলতা!

কর্পোরেট হোস্টিং এর তুলনা করি মার্কেটের পজিশন ইজারার সাথে, তুলনামুলক কম রেস্টিকশন। এভাবে, ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ের সাথে ভাড়া কিরা ফ্লাটের সাথে, ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার মানে নিজের কিনা ফ্লাটের সাথে আর সার্ভারষ্টেশন মানে একেবারে নিজের বাড়ির সাথে।

কি উদাহরন গুলি জীবন ঘনিষ্ট না? গ্রাহকের এরপরও বুঝতে বাকি থাকে? এম্নি করে, আপনার সেবা বা পন্যের সাথে জীবনঘনিষ্ট কিছু উদাহরন তৈরি করুন। কিংবা খূজে দেখুন।

আমার আরেকটা সেবা ‍SEO সার্ভিসের উদাহরন দেই। ‍আইটি সংশ্লিষ্টরা ভাল বুঝবেন। SEO সার্ভিস দিতে গিয়ে আমার গ্রাহকদের সাথে আমার বিস্তর অভিজ্ঞতা এমন হয়েছে যে আমি নিজেই এখন একটা উদাহরন। মাঝে মাঝে অবাক হই, এত ধৈর্য্য আমি পাইলাম কই? SEO সার্ভিস গ্রহনের পর পরই গ্রাহকের চাহিদা থাকে, তার সাইট যেন টপে থাকে। চাহিদাটা অমূলক নয়, পে করছে। টাকা খরচ করছে... চাহিদা তো থাকবেই। কিন্তু চাহিদা আর বাস্তবিকতাতো ভিন্ন এটা বুঝাবেন কি করে?

কিছু গ্রাহকতো আমাকে বলেই ফেলছে....

“ভাই আপনাকে বিশ্বাস করছিলাম।”
“ধূর মিয়া কই আমারটা তো টপে নাই”
”আপনি নিজেও হাটেন না, রাস্তাও ছাড়েন না”
“সার্ভিসে সন্তুষ্ট না”
“কি ধুনফুন বুঝান, বুঝি না”
“মগা পাইছেন ভাই, মগা বানাই চার্জ নিলেন। সার্ভিস দিলেন না”

উপরের যে, ছয়টা বক্তব্য পড়েছেন। এই জীবনে অসংখ্যবার একই কথা শুনেছি। এই কথা গুলি শব্দগুলি নন কর্পোরেট লেঙ্গুয়েজ। কিন্তু আমাদের আইটি ইন্ডাস্ট্রির অসংখ্য টাউট বাটপারদের কারনে আমরা যারা নিরলশভাবে এই ইন্ডাস্ট্রিকে দাড় করানোর চেষ্টা করছি তারা ভুক্তভোগী। এবং আমরা এই বক্তব্য গুলিকে ডিসার্ব করি। কিন্তু দিন শেষে, আল্লাহর রহমতে আমি তাদেরকে চুক্তিমতো সার্ভিস ঠিকই দিয়েছি এবং তারাও এর সুফল ভোগ করেছে এবং আগামীতেও করবে ইনশাল্লাহ!

কিন্তু এর বিপরীতে আমার বক্তব্য কি ছিল? স্রেফ সার্ভিস! নাথিং! না কারো বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে, না কারোটা সার্চ ইঞ্জিন রেকিং এ পিছিয়েছে। না কেউ আমার কাছে থেকে সার্ভিস ট্রান্সফার করে চলে গেছে। সার্ভিসেও সন্তুষ্টি এনেছি।

অথচ এরা সবাই আমার বহু পুরাতন ক্লায়েন্ট। আমার সবচেয়ে কঠিন ও দুষ্সময়ে এরা পাশে ছিল। আমি যর্থার্থ এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করি আমার অভিজ্ঞতা ও পরিশ্রমের সর্বোচ্চটা দিতে।
আপনি বা আপনার প্রতিষ্ঠান যে সেবা বা যে পন্য নিয়েই কাজ করুক। পেপার ওয়ার্ক ঠিক রাখুন, চুক্তি এবং চুক্তির বাইরে যা কিছুই আছে! কমিটমেন্ট ঠিক রাখবেন।

"পাবলিক বাস SEO শিক্ষালয়"
প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকি। একটা বাস যদি আসে, কোনমতে ধাক্কা খেয়ে বা দিয়ে উঠে পরি। প্রথম টার্গেট থাকে সামনের দিকে সিট পাই কিনা। এরপর টার্গেট থাকে সামনে না পাই, পিছে বা চাকার উপরে পেলেও সমস্যা নাই। তারপর চিন্তায় আসে- ভাই যেখানেই সিট হউক, বসে যেতে পারলেই হয়। তারপর চিন্তা করি কিসের বসে যাওয়া, কোন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলেও তো অফিস এর সময়টা ধরা যাবে। তাও যদি না হয়, গেটে হেল্পার ভাই এর সাথে একটু ঝুলে ঝুলে যেতে পারলেও তো যেতে পারলাম!!

"সামনের দিকে সিট পাই কিনা" প্রত্যাশাটা শেষ হল কোথায়? গেটে ঝুলে হলেও ভাই যেতে হবে,এখানে এসে । বুঝলেন ব্যাপারটা ? পাবলিক বাসটা ঠিক SERP(Search Engine Ranking Page) এর মত।

যখন এসইও এর কাজ করবো তখন SERP এর 1st পজিসন ছাড়া আর কোন অপশন নিয়ে ভাববো না। কারণ moz এর তথ্য অনুযায়ী, টোটাল সার্চ এর ৭১ শতাংশ ট্রাফিক থাকে serp এর প্রথম পেজে। যেটাকে তুলনা করতে পারেন আমার বাসে উঠে শুরুর দিকের চিন্তা যে সামনে সিট পাই কিনা।

মোট ট্রাফিক এর ২৭ শতাংশ থাকে SERP এর প্রথম পেজের পরে অর্থাৎ পরবর্তী পেজগুলোতে। যেটাকে তুলনা করতে পারেন আমার বাসে ওঠার পরে এই চিন্তা করার সাথে যে সামনে সিট না পাই, পিছে পেলেও তো যাওয়া যাবে। আমার সাইট প্রথম পেজে না হউক, অন্তত গুগল তো চিনসে- পরের পেজে আছে। কোন না কোন দিন প্রথমে চলে আসবে। (যেমন বাসের সামনে থেকে কোন যাত্রী নেমে গেলে আমরা পটাপট পিছন থেকে সামনে যেয়ে বসি )
তারপর? বাসে যেই চিন্তাটা করি - ভাই বসে যেতে পারলেই হল। এটা হল ঠিক সেই চিন্তার মত যে এমন একটা কিওয়ার্ড নিয়ে কাজ করা যেটার সার্চ ভলিউম খুব লো, কম্পিটিশনও খুব বেশী না।মানুষ সার্চ না করুক, কম্পিটিশন তো কম, তাড়াতাড়ি rank পেয়ে গেলেই হয়। ঠিক এমনটা যে ভাই বসে বসে যেতে পারলেই হয়।

সর্বশেষ অবস্থা হল বাসের গেইটে ঝুলে ঝুলে অফিসে উপস্থিত হওয়া। এটার সাথে তুলনা করতে পারেন এমন একটা সাইট যেটার অবস্থা অনেকটা এরকম- অপ্রাসঙ্গিক কনটেন্ট, কিওয়ার্ড স্টাফিং করে লিখা, suspicious backlink , confusing & miscellaneous title লিখেও ব্ল্যাক হ্যাট করে উপরে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু একটা জিনিস ভেবে দেখা দরকার যে বাসে ঝুলে অফিসে যেতে চাইলে দুর্ঘটনায় পরে জীবনটাই শেষ হয়ে যেতে পারে। ব্ল্যাক হ্যাট ফলো করে যদি rank পেয়েও যাই, যে কোন সময় পেনাল্টি খেয়ে যেতে পারে সাইট।

চিন্তাটা তাই রাখা উচিত স্বচ্ছ । কনটেন্ট লিখবো এসইও ফ্রেন্ডলি, পাঠক যা চায় তাই যেন আমার লেখায় থাকে। টাইটেলটা যেন পাঠককে আকর্ষণ করে আর সেটা যেন হয় খুব কৌসুলি একটা টাইটেল।

পাবলিক বাসে যেখানেই সিট পাইনা কেন, উদাস নয়নে বাইরে তাকিয়ে থাকি। লোকজন কত আরামে প্রাইভেট গাড়িতে করে অফিসে যায় ।আর আমার যেতে হয় ঝুলে ঝুলে।মনে মনে ভাবি টাকা হলে একটা গাড়ি কিনবো, ঝামেলা অনেক কমবে। এই চিন্তাটাকে তুলনা করতে পারেন-টাকা হলে একটা পেইড টুল কিনবো, রিসার্চ এর ঝামেলা কমবে ভাই!

আশা করি, উপরোক্ত আলোচনা থেকে কিছু হলেও আপনাদের কাজে লাগবে। আপনার আধা ঘন্টা সময় বিফলে যাবে না।

আর আরেকটা কথা, ব্লাকমেইলিং করার মানষিকতা বাদ দিন। কারোর সার্ভিস বা পন্য সরবরাহ নীতি যদি আপনার ভাল না লাগে তবে তার সাথে চুক্তি বা কার্যাদেশ বাতিল করুন। আবার কোন গ্রাহককে আপনার যদি সার্ভিস প্রদানে অনীহা বা অনিচ্ছা থাকে, অযথাই তাকে ঝুলিয়ে রাখবেন না। প্রয়োজনে আলোচনা করুন। সুবিধা অসুবিধার কথা জানান আবারও চুক্তি বা MOU পর্যালোচনা করুন। পারষ্পারিক আলোচনার মাধ্যমে সার্ভিস প্রদান বা পন্য সরবরাহ করুন। আপনার ইন্ডাষ্ট্রি আপনারই হাতে। আপনার সফলতা আপনারই হাতে। সর্বদা উইন উইন সিচুয়েশন মাথায় রাখুন।

গ্রাহক সেবাদাতাকে- সেবাদাতা গ্রাহককে পারষ্পারিক সহযোগিতাই উত্তরনের একমাত্র পথ।