কত কত প্রেম আমার জীবনে, সব ক্ষনস্থায়ী! সেই ছোটবেলায় প্রেমে পড়েছিলাম প্রাইমারি স্কুলের গেটে দাড়িয়ে আচার বিক্রেতার ছোট মেয়েটার! নাম জানা হয়নি। সাহস করে কখনো জিগেস করা হয়নি। প্রেমে পড়েছিলাম, বেদে মেয়ে তুড়তুড়ির। টানা টানা হরিন চোখ সস্তা কাজলে সাজানো চোখ আর রঙ্গিন কাগজের রংয়ে রাঙ্গানো ঠোট। স্কুলের মেম, কলেজের মিস! কর্পোরেট জীবনে কত কত গ্রাহকের। একবার প্রেমে পড়েছিলাম এক নার্সের। আহা! কি মায়াবি, কত চেনা। কত খুনসুটি। প্রেমে পড়েছিলাম এএসআই পদমর্যাদার এক নারীপুলিশের! হরতালে পিকেটিং করতে গিয়ে এরেস্ট হয়েছিলাম। বলেছিলাম, “আপনার হাতে তালু বন্ধি থাকতে ভালই লাগছে গো” বড় বেরসিক! হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে দিল। সচিবালয়ের এক আপা ছিলেন, বিনা কারনে কাজের বাহানায় উনার অফিসে গিয়ে বসে থাকতাম। এটা ওটা নিয়ে কত কাজের সন্ধান! উনি বোধকরি বুঝতে পেরেছেন, একদিন গিয়ে দেখি উনি বদলি হয়েছেন। ধুর! প্রেম বুঝলো না, অথচ আমি কোনদিন বিরক্ত করিনি।

মামা বলেছিলেন, ”বড় যদি হতে চাস, ছোট হও আগে।” কি কাজ করবো মামা? বললেন জুতার দোকানে গিয়ে কাজ কর। মুচি আসবে, কামার আসবে, রিক্সাওয়ালা আসবে। মেয়েরা আসবে। পায়ে ধরে জুতা পরিয়ে দিতে হবে। আত্ম অহংকার ধুলায় মিশে যাবে। আত্ম অহংকার থাকলে মানুষ বড় হতে পারে না, ভাগিনা। মামার কথা মত, জুতার দোকানে কাজ নিলাম। পার্ট টাইম যদিও। কিন্তু কিসের কি, আমি মেম সাহেবদের পায়ে হাত দিয়ে জুতা পরিয়ে দেই, এটা দেখাই ওটা দেখাই। হঠাৎ একদিন একটি পা! কিযে সুন্দর পা। মানুষের পা এত সুন্দর হতে পারে? কিন্তু ভাল করে তাকিয়ে দেখি, মেমসাহেবের মুখ বিবর্ন, ফ্যাকাসে। বললাম, ম্যাডাম আমাদের কালেকশনের কোন ডিজাইনের জুতা আপনার পছন্দ? বললেন, আপনার পছন্দের একটি জুতা আমাকে পরিয়ে দিন। ধাক্কা খাওয়া পালা আমার, নিজের পছন্দমতো একজোড়া জুতা আমি উনাকে পড়িয়ে দিতে যাব। ডানপাটি জুতা আমার হাতে…. কিন্তু উনার যে ডান পা নাই। আমি সেবার খুব কষ্ট পেয়েছি। উনি বললেন আপনি বোধহয়, প্রথমে খেয়াল করেন নি, তাছাড়া আমি বলেছি একটি জুতার কথা, এক জোড়া নয়! আমিও দুঃখ পেলাম খুব। অনেক কষ্ট, অনেক যন্ত্রনা বুকে চেপে রেখে। উনার বা পায়ে একটি জুতাই পরিয়েছি। সেদিনই ছিল, জুতার দোকানে আমার শেষ দিন। আমি উনাকে খুজি উত্তরার রাস্তায় রাস্তায়, ক্ষমা চাইবো বলে।

আমার প্রেমিকারা – প্রথম কিস্তি!